
প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ৪ জুন ১৯৯৯
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবন্ধাবলি
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী সমস্যা ও ভারত
প্রবন্ধাবলি
প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ৪ জুন ১৯৯৯
DOI:
ISSN:
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিভিন্নভাবে বহুবিধ আলোচনা হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে শরণার্থী প্রসঙ্গটিও এসেছে। কিন্তু শরণার্থী ইস্যু নিয়ে ভারতের সামগ্রিক ভূমিকা বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজ ও জাতিসংঘে দেশটির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি প্রায় অনুল্লেখিত এ কথা বলা যায়। বর্তমান প্রবন্ধে তথ্য ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই অবহেলিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ দিকটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সমর্থক ভারত সূচনা থেকেই শরনার্থীদের উদারভাবে আশ্রয় দিয়েছে। ২৫ মার্চের মধ্যরাতের গণহত্যার অব্যবহিত পরে যে জনস্রোত ভারতীয় সীমান্তের দিকে ধাবিত হতে থাকে তাদের জন্য সবকটি সীমান্তাঞ্চল উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। মে মাসে শরণার্থীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ লাখ এবং ১৫ ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাড়ায় ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জনে।
বর্তমান প্রবন্ধে মূলত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করা হয়েছে। প্রথমত, শরণার্থী নিয়ে ভারত সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন শিবির স্থাপন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, ভারত কর্তৃক শরণার্থীদের পেছনে ব্যয়, বাজেটে করারোপ এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহণের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্পৃক্তি এবং হস্তক্ষেপের পটভূমির প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। ফলে স্বীকৃতি প্রশ্ন এবং শরনার্থী নিয়ে ভারতের কৌশলগত অবস্থানও আলোচনায় এসেছে। তৃতীয়ত, ভারতে শরনার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকাসমূহে প্রকাশিত সংবাদসমূহের বিবরণ ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। একই সমান্তরালে শরণার্থী ও বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতীয় পার্লামেন্টের ভূমিকা আলোচিত হয়েছে। চতুর্থত, শরণার্থী প্রসঙ্গটি ভারত কীভাবে জাতিসংঘে উত্থাপন করেছে তার একটি নাতিদীর্ঘ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের অনেক রাজনৈতিক নেতা ও আমলা কাশ্মির, পাঞ্জাব ও পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বিগ্ন ছিলেন। একই যুক্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সমর্থনে তারা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু শরণার্থী সমস্যার ক্রমাগত চাপের জন্য ভারত বাংলাদেশ প্রশ্নে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। প্রখর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদৃষ্টির কারণে ইন্দিরা গান্ধী রাজনৈতিক সমীকরণের সঠিক হিসাব করেন এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি ছিলেন স্থিরচিত্ত। তদুপরি সমস্যাটি স্থায়ী হলে ভারতের অর্থনীতি যে ভেঙ্গে পড়তো তা ইন্দিরা গান্ধী গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন।
বাংলাদেশ প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করার জন্য আইনগত যুক্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী ইস্যুকে অত্যন্ত কুশলতার সাথে কাজে লাগিয়েছেন। ফলে শরণার্থী খাতে ব্যয় মেটানোর জন্য জাতিসংঘ, বিভিন্ন দাতা দেশ ও গোষ্ঠীর সহায়তার বিষয়টি ভারত সরকার বিবেচনা করে। তবে ভারতের কাছে শরণার্থী প্রশ্নটি ছিল বাংলাদেশকে সর্বোতভাবে সহায়তার একটি সহজ উপায়। আবার শরণার্থী সমস্যাই বাংলাদেশ আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাঁচিয়ে রাখে। মার্চ-এপ্রিলের গণহত্যা সম্পর্কে বহির্বিশ্বের নিন্দাবাদ একটা সময় দুর্বল হয়ে যেত। কারণ চীন,