প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ৫ ডিসেম্বর ২০০৪
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবন্ধাবলি
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের নারীদের আর্থ সামাজিক অবস্থাঃ একটি তুলনামূলক
প্রবন্ধাবলি
প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ৫ ডিসেম্বর ২০০৪
DOI:
ISSN:
সারসংক্ষেপ
সারসংক্ষেপ: পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী বলতে কন্যা, জায়া ও জননী এ তিনটি রূপকেই বুঝানো হয়ে থাকে। একটি শিশু জৈবিকভাবে স্ত্রী অঙ্গ নিয়ে জন্মালেও জন্ম লগ্ন সে জানেনা সে নারী না পুরুষ। সামাজিক অনুশাসনের বেড়াজালে পরবর্তীতে তাকে মেয়েলি করে তোলা হয় এবং তার সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হয় নানা রকম বিধিনিষেধ। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কর্তৃক আরোপিত এই লিঙ্গ বিভাজন নারীর জন্য বয়ে এনেছে পদে পদে অসাম্য ও বঞ্চনার ইতিহাস। শুধু সমাজ নয়, পরিবারেও মেয়েরা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার। শিক্ষা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে উন্নত দেশে এই বৈষম্য কমে এলেও বাংলাদেশে এখনও তা প্রকটভাবে বিরাজমান। আজও দেশে পুত্র সন্তানকে 'সম্পদ' এবং কন্যা সন্তানকে 'বোঝা' মনে করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবরূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সহায়তা চাইতে গিয়ে তারা পুলিশ কর্তৃকও নির্যাতিত হচ্ছে। পুলিশের কাছে এদেশের আজও অনেক মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হচ্ছে যার ফলে শিশু জন্ম হার এবং মাতৃ মৃত্যুহার এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌছাতে পারেনি। মাতৃত্বের কারণে নারীর শিক্ষা জীবন; চাকুরি জীবন ব্যাহত হলেও সন্তানের অভিভাবকত্ব পিতার, মাতার নয়। সরকারীভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও নারী শিক্ষার হার পুরুষের তুলনায় কম। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ তার স্বীকৃতি দিচ্ছে না। গৃহস্থালী কাজে দৈনিক ১৬-১৮ ঘণ্টা শ্রম দিলেও এ কাজের কোন স্বীকৃতি নেই। নারী ও পুরুষের কাজ এবং মজুরির মধ্যেও বৈষম্য বিদ্যমান। উচ্চতর পদে নারী প্রতিনিধিত্ব পুরুষের তুলনায় নগন্য। এমনকি যে ক্ষেত্রগুলো নারী শ্রমিক দ্বারা অধ্যুষিত সেখানেও পুরুষের প্রাধান্য লক্ষ্যনীয়। স্বাস্থ্য সেবা ও পুষ্টির ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষের তুলনায় কম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হলেও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এদেশে নারী এবং পুরুষের হার (১০৪: ১০০) প্রায় এক হলেও নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত সারণীতে তা লক্ষ্যনীয়। তাই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতির জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে- এইদিকটি তুলে ধরাই হচ্ছে এ প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।