প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ১১ জুলাই ২০১৯
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবন্ধাবলি
উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আব্বাসি সামানি সম্পর্ক : একটি পর্যালোচনা
প্রবন্ধাবলি
প্রবন্ধাবলি, খণ্ড: ১১ জুলাই ২০১৯
DOI:
ISSN:
সারসংক্ষেপ
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে যাবের যুদ্ধে উমাইয়াদেরকে পরাজিত করে আব্বাসিরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট পাঁচশ বছরেরও কিছু বেশি সময় তাঁরা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেন। বাগদাদ ছিল তাঁদের রাজধানী। এ বংশের মোট খলিফা ছিলেন ৩৭ জন। প্রথম একশ বছর আব্বাসি খলিফাগণ বেশ সফলতার সঙ্গে সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। কিন্তু এর পরবর্তী সময় থেকে আব্বাসি খিলাফতে নানা ধরনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংকট দেখা দেয়। খিলাফতের এই বিবিধ সংকটের কারণে বাগদাদের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে এ সময় বেশ কিছু ক্ষুদ্র আঞ্চলিক রাজবংশের উত্থান ঘটে। পশ্চিমাঞ্চলে যে সকল রাজবংশের উত্থান ঘটে, সেগুলোর মধ্যে ছিল- ইদ্রিসি বংশ (৭৮৮-৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ), আঘলাবি বংশ (৮০০-৯০৯ খ্রিস্টাব্দ), তুলুনি বংশ (৮৬৮-৯০৫ খ্রিস্টাব্দ), ইখশিদি বংশ (১৯৩৫-৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ) ও হামদানি বংশ (৯৪৪-১০০৩ খ্রিস্টাব্দ)। আর পূর্বাঞ্চলের বংশগুলোর মধ্যে ছিল- তাহিরি বংশ (৮২০-৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ), সাফফারি বংশ (৮৬১-১০০৩ খ্রিস্টাব্দ), সামানি বংশ (৮৭৪-৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ), বুয়াইয়া বংশ (১৯৪৫-১০৫৫ খ্রিস্টাব্দ), গযনবি বংশ (৯৬২- ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দ) ও সেলজুক বংশ (১০৫৫-১১৯৪ খ্রিস্টাব্দ)। এ সকল রাজবংশের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের ইদ্রিসি ও পূর্বাঞ্চলের সাফফারি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়া বাকি বংশগুলোর প্রতিষ্ঠাতাগণ কোনো না কোনোভাবে আব্বাসি খলিফাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। তাঁরা সাধারণত প্রাদেশিক গভর্নর বা সেনাবাহিনীর কমান্ডার থেকে খলিফার মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে নিজ নিজ বংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অবশ্য বুয়াইয়া ও সেলজুক বংশের প্রতিষ্ঠাতাগণ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন। তাঁরা উভয়েই খলিফার আমন্ত্রণে বাগদাদে প্রবেশ করেন এবং পর্যায়ক্রমে খলিফার মূল রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করেন। যাই হোক সাম্রাজ্যের বিশালতা ও সামরিক শক্তির দুর্বলতার কারণে এ সকল বংশের শাসকদের সঙ্গে আব্বাসি খলিফাদের নানা ধরনের কৌশলগত সম্পর্ক রক্ষা করতে হতো। উল্লিখিত বংশগুলোর শাসকবর্গও খলিফার ধর্মীয় কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তবে এ বংশগুলোর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত সামানি বংশের শাসকনকদের সঙ্গে আব্বাসি খলিফাদের সম্পর্কের বিষয়টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সসময় (৮৬১ খ্রিস্টাব্দে) আব্বাসি খলিফাদের বিরুদ্ধবাদী নেতা ইয়াকুব বিন লাইস সিজিস্তানে সাফফারি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আব্বাসি খলিফাদের জন্য সাফফারিরা ছিল প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জস্বরূপ। তাঁরা নিশাপুর থেকে আব্বাসি খলিফার মনোনীত তাহিরি বংশীয় গভর্নরকে পরাজিত করে সমগ্র খোরাসান, ফার্স, কিরমানসহ পারস্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রদেশ দখল করে নেন। এরূপ পরিস্থিতিতে আব্বাসি এলিফাট্রান্স-অক্সিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত সামানি বংশের শাসকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। খলিফা মুতামিদ কোনো শর্ত ছাড়াই সামানি বংশের প্রতিষ্ঠাতা নসর ইবনে আহম্মদকে ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ট্রান্স-অক্সিয়ানার বৈধ শাসনকর্তা হিসেবে অনুমোদন দেন। শুধু তাই নয়, এরপর থেকে খলিফাগণ সামানিদেরকে সাফফারিদের বিরুদ্ধে নানাভাবে প্ররোচিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় ৯০০ খ্রিস্টাব্দে ইসমাইল সামানি সাফফারিদের পরাজিত করে সিজিস্তান ও খোরাসানে সামানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ধীরে ধীরেপারস্যের অন্যান্য অঞ্চলেও সামানিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আব্বাসি খলিফাগণও তাঁদেরকে অত্র অঞ্চলসমূহের বৈধ শাসনকর্তার অনুমতি দেন। এভাবে পারস্যে সাফফারিদের স্থলে সামানি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, আর আব্বাসি খলিফাদের জন্য এটি ছিল বড় স্বস্তির বিষয়। কারণ সামানিদের সুদীর্ঘ ১২৫ বছরের (৮৭৪-৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ) শাসনকালে আব্বাসি খলিফার কর্তৃত্ব (ধর্মীয় কর্তৃত্ব ট্রান্স-অক্সিয়ানা ও পারস্যের বিভিন্ন প্রদেশে বহাল ছিল। এ দীর্ঘ সময়ে খলিয় লিফাদের সঙ্গে সামানি শাসকদের ইতিবাচক ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্তমান প্রবন্ধে আব্বাসি খলিফাদের সঙ্গে সামানি বংশের শাসকদের এই সম্পর্কের বিষয়টি নির্ণয় করা হয়েছে।
মূল শব্দ:
আব্বাসি খিলাফত, সামানি বংশ, সমরকন্দ, বুখারা, নসর বনে আহম্মদ, ইসমাইল ইবনে আহম্মদ।